সংক্রামক রোগ কাকে বলে ও কি কি?

সংক্রামক রোগ কাকে বলে? সংক্রামক রোগ কি কি? সংক্রামক রোগের তালিকা, সংক্রামক রোগ কিভাবে ছড়ায়, সংক্রামক রোগের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার আলোচনা করা হয়েছে।

সংক্রামক রোগ কাকে বলে?

যে সকল রোগের জীবাণু বায়ু, পানি বা অন্য কোনো মাধ্যমের সাহায্যে শরীরে প্রবেশ করে তাকে সংক্রামক রোগ বা Communicable Disease বলে। অন্যভাবে, সংক্রামক রোগ হল এমন এক ধরনের রোগ যা একজন ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। সেক্ষেত্রে মানুষ থেকে মানুষে, পশু-পাখি থেকে মানুষে অথবা মানুষ থেকে পশুপাখিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিভিন্ন প্রকার পদ্ধতির মাধ্যমে সংক্রামণ হতে পারে যেমন, শারীরিক সংস্পর্শ, পানি, বায়ু ইত্যাদি। এই প্রকার সংক্রমণ ব্যাধির মূল বৈশিষ্ট্য হলো নির্দিষ্ট রোগের সংক্রমণে সেই রোগটিই হয়। যেমন: যক্ষ্মা একটি ব্যাকটেরিয়া ঘটিত সংক্রামক রোগ। Mycobacterium tuberculosis নামক ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে যক্ষ্মা রোগ হয়, যার বিস্তারের মাধ্যম হলো বায়ু।

সংক্রামক রোগ কি কি? সংক্রামক রোগের তালিকা

সংক্রামক তিন ধরনের হতে পারে, যথাঃ

ক) দ্রুত সংক্রামণঃ কলেরা, আন্ত্রিক, প্লেগ।
খ) মধ্যম সংক্রমণঃ ম্যালেরিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা।
গ) দীর্ঘ সংক্রমণঃ এইডস, দাদ, চুলকানি ইত্যাদি।

সংক্রামক রোগ কিভাবে ছড়ায়?

সংক্রামক রোগের জীবাণুগুলি বিভিন্ন উপায়ে একজন থেকে অন্যজনের দেহে ছড়িয়ে পড়তে পারে, যেমন: হাত মেলানো, চুম্বন, বা রোগীর শরীরের তরলের সংস্পর্শে। কাশি বা হাঁচির মাধ্যমে বাতাসে ছড়িয়ে পড়া জীবাণু শ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। দূষিত জল বা খাবার খাওয়ার মাধ্যমে। মশা, মাছি ইত্যাদি কীটপতঙ্গ কামড়ের মাধ্যমে।

সংক্রামক রোগের কারণ কী?

সংক্রামক রোগের প্রধান কারণ হলো বিভিন্ন ধরনের জীবাণু, যেমন ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ফাঙ্গাস এবং পরজীবী। এই জীবাণুগুলি একজন ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং রোগ সৃষ্টি করে।

  • সরাসরি বা পরোক্ষভাবে কোনো সংক্রামিত ব্যক্তি বা বস্তুর সংস্পর্শে আসার ফলে জীবাণু শরীরে প্রবেশ করতে পারে। যেমন: কাশি, হাঁচি, জীবাণুযুক্ত হাত দিয়ে মুখ বা নাক ছোঁয়া, সংক্রামিত খাবার খাওয়া।
  • কাশি বা হাঁচির মাধ্যমে বাতাসে ছড়িয়ে পড়া জীবাণু শ্বাসের সাথে শরীরে প্রবেশ করে। উদাহরণ: কামলা, ইনফ্লুয়েঞ্জা।
  • দূষিত জল পান করার মাধ্যমে জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে। উদাহরণ: কলেরা, টাইফয়েড।
  • দূষিত খাবার খাওয়ার মাধ্যমে জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে। উদাহরণ: স্যালমোনেলা, ই. কোলি সংক্রমণ।
  • মশা, মাছি ইত্যাদি পোকামাকড় কামড়ালে জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে। উদাহরণ: ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু।
  • অসুরক্ষিত যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে কিছু ধরনের জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে। উদাহরণ: এইডস, সিফিলিস।
  • হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার সময় কিছু কিছু ক্ষেত্রে সংক্রমণ হতে পারে।

সংক্রামক রোগের লক্ষণ কি কি?

সংক্রামক রোগের লক্ষণ বিভিন্ন হতে পারে এবং রোগের ধরন, ব্যক্তির স্বাস্থ্য এবং অন্যান্য কারণের উপর নির্ভর করে। তবে, কিছু সাধারণ লক্ষণ নিম্নরূপ:

  • অনেক সংক্রামক রোগের প্রাথমিক লক্ষণ হল জ্বর।
  • শ্বাসনালীর সংক্রমণে সাধারণত কাশি হয়।
  • ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণে গলা ব্যথা হতে পারে।
  • নাক দিয়ে পানি পড়া, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
  • অনেক সংক্রমণই শরীরে অতিরিক্ত কাজ করায় থক্কা অনুভূতি দেয়।
  • অনেক খাদ্যবাহিত সংক্রমণে পেট খারাপ হয়।
  • জ্বরের সাথে সাথে মাথাব্যথাও হতে পারে।
  • শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় দুর্বলতা অনুভূত হতে পারে।

সংক্রামক রোগ প্রতিকারের উপায়

আধুনিক সভ্য সমাজে মানুষ রোগ প্রতিরোধের জন্য নিম্নরূপ উপায়গুলির উপর গুরুত্ব আরোপ করে-

ক) বিজ্ঞপ্তি প্রচার: সংক্রামক রোগের সংবাদ পাওয়া মাত্র স্বাস্থ্যবিভাগ অঞ্চলের সর্বত্র ব্যাধির ভয়াবহতা বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করবেন। পরে স্বাস্থ্য বিভাগ রোগীকে হাসপাতালে বা চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে পৃথক রেখে চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন।

খ) পৃথকীকরণ: যদি কোনো করণে রোগীকে হাসপাতাল বা চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া সম্ভব না হয়, সেক্ষেত্রে তাকে নিজের বাড়িতে পৃথক করে রাখা হবে। ডাক্তার ও যে সেবা করবে সে বাদে আর কাউকে সেই ঘরে ঢুকতে দেওয়া হবে না। রোগীর মল, মূত্র, কফ অর্থাৎ রোগীর ব্যবহৃত সামগ্রীতে জীবাণুনাশক লোশন ব্যবহার করতে হবে। মোট কথা, রোগীকে সম্পূর্ণ পৃথক রাখার যাবতীয় ব্যবস্থা অবলম্বন করা প্রয়োজন।

গ) ইনজেকশন ও টিকা প্রদান: প্রত্যেকের দেহে রোগ প্রতিরোধের একটা স্বাভাবিক ক্ষমতা থাকে। এই সহজাত ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করতে পারলে রোগজীবাণু দেহে প্রবেশ করলেও সহজে কাবু করতে পারে না। দেহের অনাক্রমতা বৃদ্ধির জন্য injection ও টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। সুতরাং বিধিসম্মত উপায়ে শরীরের সহজাত শক্তি বৃদ্ধির জন্য এগুলির সাহায্য নেওয়া প্রয়োজন।

ঘ) নিরোধ: সংক্রামক ব্যাধি এক দেশ থেকে অন্য দেশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। আজকাল বিদেশিদের বন্দরে আসার সময় দেহ পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। যাত্রীদের পাসপোর্ট দেওয়ার সময় সংক্রামক রোগের টিকা নেওয়ার সার্টিফিকেট দেখাবার ব্যবস্থা আছে।

ঙ) জনস্বাস্থ্য বিষয়ক ব্যবস্থা: জনগণকে স্বাস্থ্য সচেতন করা, সার্বিক স্বাস্থ্য সংরক্ষণের অনুকূল ব্যবস্থা গ্রহণ করার দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে কর্পোরেশন, মিউনিসিপ্যালিটি ও পঞ্চায়েত প্রশাসনের উপর। রোগ প্রতিষেধক ব্যবস্থাদি গ্রহণ ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নের উদ্দেশ্যে এইসব কর্তৃপক্ষ যেসব বিষয়ে দৃষ্টি রাখবেন সেগুলি হলো গৃহ-সংলগ্ন নালা, গৃহের ময়লা ফেলার ব্যবস্থা, সঠিক জল সরবরাহ ব্যবস্থা, কারখানার দূষিত পদার্থকে দূর করা, মাছি, মশা প্রভৃতি রোগজীবাণু বাহকদের বিনাশ করা, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানার ব্যবস্থা করা এবং সবশেষে বলা যায় – পরিবেশদূষণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা ও ওই সংগ্রামে সকলকে শামিল করার উপায় বার করা।

চ) স্বাস্থ্য-শিক্ষাদান: বিদ্যালয় স্তরের শিক্ষাগ্রহণ করার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সচেতন করা প্রয়োজন। ফলে সেই সচেতনতা সমাজের প্রত্যেকটি স্তরে চলে যেতে পারে।

আরো পড়ুনঃ

Leave a Comment