চিকিৎসার ধারা অনুযায়ী ওষুধের শ্রেণিবিভাগ

চিকিৎসার ধারা অনুযায়ী ওষুধের শ্রেণিবিভাগ করতে গিয়ে ওষুধকে এলোপ্যাথি, হোমিওপ্যাথি, আয়ুর্বেদীয় ও ইউনানী এইসব ভাগে ভাগ করা হয়েছে। সাধারণভাবে আমরা যে সব ওষুদ গ্রহণ করি তার বেশির ভাগই হচ্ছে বিভিন্ন রাসায়নিক। এছাড়া অন্যান্য ধরনের ওষুধও রয়েছে। এখানে চিকিৎসাধারা অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের ওষুধের কথা সংক্ষেপে আলোচনা করা হলোঃ

এলোপ্যাথি (Allopathy): বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে গাছগাছড়ার ওপর নির্ভরতা কমিয়ে ওষুধের মূল উপাদান দিয়ে চিকিৎসা করার জন্য এই পদ্ধতি। এটি বর্তমান সময়ের মূলধারার ওষুধ যা দ্রুত রোগ উপসম করে। এই জন্য চিকিৎসক ও রোগীদের কাছে এটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সাধারণত বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান দিয়ে এ ধরনের ওষুধ তৈরি করা হয়। এটি অত্যন্ত বিশুদ্ধ এবং সুনির্দিষ্ট রোগের ওপর কাজ করে বলে এর কার্যক্ষমতা বেশি। এলোপ্যাথি ওষুধের মুল অসুবিধা হল এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এই ধরনের ওষুধ ব্যবহার বিপজ্জনক। তাই রোগ লক্ষণ ভালো ভাবে বুঝে এরপর এই ওষুধ প্রয়োগ করতে হয়।

চিকিৎসার ধারা অনুযায়ী ওষুধের শ্রেণিবিভাগ

হোমিওপ্যাথি (Homeopathy): অষ্টাদশ শতকে জার্মান চিকিৎসক ও রসায়নবিদ স্যামুয়েল হ্যানিম্যান হোমিওপ্যাথির ধারণা দেন। এই পদ্ধতিতে ওষুধ বিভিন্নমাত্রায় রোগীর শরীরে প্রয়োগ করা হয়। ওষুধের যে মাত্রায় রোগীর সমলক্ষণ প্রকাশিত হয় সেই মাত্রায় ওষুধ কার্যকর বলে ধরে নেওয়া হয় এবং চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন ধরনের ভেষজ উদ্ভিদ থেকে হোমিওপ্যাথি ওষুধ তৈরি করা হয়। যেমন: বেলাডোনা, নাক্সভমিকা, থুজা প্রভৃতি। হোমিও ওষুধের কার্যকারিতা অত্যন্ত ধীর। তাই রোগমুক্তির জন্য দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন। একারণে সহজলভ্য ও দামে কম হলেও এটি মূলধারার ওষুধ হয়ে ওঠতে পারে নি।

আয়ুর্বেদীয় (Ayurveda): সুপ্রাচীন এই চিকিৎসাধারার ইতিহাস প্রায় ৫,০০০ বছরের। ভারতবর্ষে এর উৎপত্তি। ভারতের চরক, শুশ্রুত, ধন্বত্নরী, ভরদ্বাজ প্রমুখ এই ধারার শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীদের কয়েকজন। চরক-সংহিতা ও শুশ্রুত – সংহিতা এর মূল ভিত্তি। আয়ুর্বেদ মতে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড যেমন বিভিন্ন উপাদানে তৈরি, তেমনি মানবদেহও বিভিন্ন উপাদানে তৈরি। যখন কোন উপাদানে ঘাটতি হয় তখন শরীর রোগাক্রান্ত হয়। উদ্ভিজ, প্রাণীজ বা খনিজ বিভিন্ন প্রাকৃতিক ওষুধ উপযুক্ত পথ্যের সহায়তায় শরীরকে সুস্থ করে। আয়ুর্বেদ ধারায় চিকিৎসকেরা ‘কবিরাজ’ বা ‘বৈদ্য’ নামে পরিচিত।

ইউনানি (Unani): গ্রিসের ইউনান প্রদেশে সর্বপ্রথম এই ধারার উৎপত্তি বলে এটি ইউনানি নামে পরিচিত। পরবর্তীকালে মধ্য যুগে ইবনে সিনাসহ আরবীয় চিকিৎসকগণ ইউনানি ধারাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেন। এধারায় রোগলক্ষণকে পাশ কাটিয়ে রোগের চিকিৎসা করা হয়। রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রধানত রোগীর নাড়ির গতি, মল-মূত্র ইত্যাদি পরীক্ষা করা হয়। আয়ুর্বেদের মতো এখানেও উদ্ভিজ প্রাণীজ বা খনিজ বিভিন্ন প্রাকৃতিক ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। তবে আয়ুর্বেদের সাথে এর প্রধান পার্থক্য হলো এই চিকিৎসা ব্যবস্থায় ওষুধকে সুমিষ্ট, সুস্বাদু ও সুগন্ধময় করে তৈরি করা হয়। এই ধারার চিকিৎসকেরা ‘হেকিম’ বা ‘হাকিম’ বা ‘তিব্ব’ নামে পরিচিত।

আরো পড়ুনঃ

Leave a Comment