প্রস্রাবে ইনফেকশনের লক্ষণ ও প্রতিকার

প্রস্রাবে ইনফেকশন বলতে কি বুঝায়?

প্রস্রাবে ইনফেকশন, যা ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (UTI) নামেও পরিচিত, মূত্রতন্ত্রের যেকোনো অংশে জীবাণুর সংক্রমণ। মূত্রতন্ত্রের মধ্যে থাকে কিডনি, ইউরেটার, মূত্রথলি এবং মূত্রনালি।

প্রস্রাবে ইনফেকশনের লক্ষণ

  • প্রস্রাবে জ্বালা: প্রস্রাব করার সময় তীব্র জ্বালা অনুভূত হওয়া।
  • বারবার প্রস্রাবের ইচ্ছা: প্রায়শই প্রস্রাবের ইচ্ছা অনুভূত হওয়া,
    এমনকি মূত্রথলি পুরোপুরি না ভরেও।
  • অল্প পরিমাণে প্রস্রাব: প্রতিবার প্রস্রাবের পরিমাণ কম হওয়া।
  • প্রস্রাবে দুর্গন্ধ: প্রস্রাবের তীব্র ও বিতিক্রমী গন্ধ।
  • পেটে ব্যথা: পেটের নিচের অংশে বা পিঠের দিকে ব্যথা অনুভূত হওয়া।
  • মলত্যাগের সময় জ্বালা: মলত্যাগের সময় পায়ু পথে জ্বালা অনুভূত হওয়া।
  • জ্বর: ইনফেকশনের তীব্রতার উপর নির্ভর করে হালকা বা তীব্র জ্বর হতে পারে।
  • বমি বমি ভাব: বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
  • ঠান্ডা লাগা: ইনফেকশনের কারণে ঠান্ডা লাগা অনুভূত হওয়া।

প্রস্রাবে ইনফেকশনের কারণ

  • ই. কোলাই: ই. কোলাই নামক ব্যাকটেরিয়া প্রস্রাবে ইনফেকশনের সবচেয়ে সাধারণ কারণ।
  • অন্যান্য ব্যাকটেরিয়া: স্ট্যাফাইলোককাস, এন্টারোকোকাস, প্রোটিয়াস ইত্যাদি ব্যাকটেরিয়াও প্রস্রাবে ইনফেকশন ঘটাতে পারে।
  • যৌন সংক্রমণ: কিছু যৌন সংক্রমিত রোগ, যেমন ক্ল্যামিডিয়া এবং গনোরিয়া, প্রস্রাবে ইনফেকশন ঘটাতে পারে।
  • মূত্রনালীর বাধা: প্রোস্টেট গ্রন্থির বৃদ্ধি, কিডনিতে পাথর, বা মূত্রনালীর সংকীর্ণতা প্রস্রাবে ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।
  • দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: ডায়াবেটিস, স্টেরয়েড ব্যবহার, বা ক্যান্সারের মতো অবস্থা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে প্রস্রাবে ইনফেকশনের
    ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।

প্রস্রাবে ইনফেকশনের চিকিৎসা

  • অ্যান্টিবায়োটিক: প্রস্রাবে ইনফেকশনের চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। চিকিৎসক ইনফেকশনের তীব্রতার উপর নির্ভর করে উপযুক্ত
    অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ এবং ডোজ নির্ধারণ করবেন।
  • প্রচুর পরিমাণে পানি পান: প্রচুর পরিমাণে পানি পান করলে মূত্রথলি থেকে ব্যাকটেরিয়া বের করে ফেলতে সাহায্য করে। প্রতিদিন 2-3 লিটার পানি পান করার চেষ্টা করুন।
  • প্রস্রাবের আগে ও পরে হাত ধোয়া: প্রস্রাবের আগে ও পরে সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোয়া জীবাণুর বিস্তার রোধে সাহায্য করে।
  • লবণযুক্ত খাবার ও ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলা: লবণযুক্ত খাবার ও ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় মূত্রাশয়ের জ্বালা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
  • আলগা ও আরামদায়ক পোশাক পরা: আলগা ও আরামদায়ক পোশাক পরলে মূত্রাশয়ের জ্বালা কমাতে সাহায্য করে।
  • যৌনতা এড়ানো: ইনফেকশন সম্পূর্ণভাবে সার না হওয়া পর্যন্ত যৌনতা এড়ানো উচিত।
  • প্রয়োজনে ব্যথার ওষুধ: ব্যথার তীব্রতা বেশি হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যথার ওষুধ খেতে পারেন।

প্রস্রাবে ইনফেকশন প্রতিরোধে কিছু টিপস

  • প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন: প্রতিদিন 2-3 লিটার পানি পান করুন।
  • প্রস্রাবের তাড়া পেলে দ্রুত প্রস্রাব করুন: প্রস্রাব দীর্ঘক্ষণ ধরে রাখবেন না।
  • প্রস্রাবের পরে মূত্রনালী পরিষ্কার করুন: প্রস্রাবের পরে সামনের দিক থেকে পিছনের দিকে মূত্রনালী পরিষ্কার করুন।
  • নিয়মিত যৌনাঙ্গ পরিষ্কার করুন: সাবান ও পানি দিয়ে নিয়মিত যৌনাঙ্গ পরিষ্কার করুন।
  • যৌনতা চলাকালীন কনডম ব্যবহার করুন: যৌনতা চলাকালীন কনডম ব্যবহার করলে প্রস্রাবে ইনফেকশনের ঝুঁকি কমে।
  • মধুমেহ নিয়ন্ত্রণে রাখুন: যদি আপনার ডায়াবেটিস থাকে, তাহলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
  • দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করুন: স্বাস্থ্যকর খাবার খান, নিয়মিত ব্যায়াম করুন এবং পর্যাপ্ত ঘুমান।

প্রস্রাবে ইনফেকশন একটি সাধারণ সমস্যা হলেও, এটি উপেক্ষা করা উচিত নয়। যদি আপনার প্রস্রাবে ইনফেকশনের লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

আরো পড়ুনঃ

Leave a Comment